জগন্নাথ সামন্ত: নিউ নর্মালের ছোঁয়া লাগতে চলেছে এবার কলকাতার ঐতিহ্যবাহী বাড়ির পুজোতেও। পারিবারিক পুজোর উদ্যোক্তারাও এবার তাঁদের নিজেদের বাড়িতেও দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেই জানা যাচ্ছে। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে কয়েকশো পারিবারিক পুজো এ শহরের ঐতিহ্য। এগুলির মধ্যে একশ, দুশো, তিনশো এমনকি তারও প্রাচীন পুজো রয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে ওইসব বাড়িতেও ঠাকুর দেখতে দর্শনার্থীর ঢল নামে। এবার দর্শনার্থী শুধু নিয়ন্ত্রণে রাখাই নয়, যাঁরা বাড়ির পুজো দেখতে আসবেন তাঁদের কোভিড বিধি মেনে নিউ নর্মালের দুর্গাপুজোয় কিভাবে বাড়ির প্রতিমা দেখার সুযোগ করে দেওয়া যায় তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে পরিবারকে।
শহরের দক্ষিণে যাদবপুরের রামগড়ে ঘটকবাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। সে হিসেবে রামগড়ের ঘটকবাড়ির পুজো এবার ৭৩ বছর পেরিয়ে ৭৪-এ পড়লেও তাঁদের সাবেক বাসগৃহ পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা বাংলাদেশের বিঝারি গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু হয় প্রায় আড়াইশো বছর আগে। পরিবারের এক কর্তা প্রসেনজিৎ ঘটক জানাচ্ছেন, আড়াইশো বছরে এবাড়ির পুজোয় ছেদ ঘটেনি কখনও। কিন্তু এবার পুজোয় আর সকল আচার আয়োজনের সঙ্গে কোভিড সংক্রমণের সতর্কতাও পুরো মাত্রায় নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের বিঝারিতে সংস্কৃত পন্ডিত পরিবার হিসেবে সুপরিচয় ছিল ঘটকদের। এঁরা পরবর্তীতে ঘটক উপাধি লাভ করেছিলেন। এই পরিবারের এক পূর্বপুরুষ বিধুভূষণ ঘটক মা সারদার প্রত্যক্ষ শিষ্য ছিলেন বলে জানা যায়। এনার ডাকে বিঝারিতে ঘটকদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন মা সারদা। উদ্বোধন প্রকাশিত গ্রন্থে মা সারদার প্রত্যক্ষ শিষ্যদের তালিকাতেও এঁর নাম রয়েছে। বিধুভূষণ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন এমনও জানা যায়। ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের প্রেক্ষাপটে ঘটক পরিবার কলকাতায় চলে আসেন। সেই থেকে পুজো চলছে এখানেই। এখন পরিবারের অনেকেই কর্মসূত্রে ছড়িয়ে পড়েছেন দেশের অন্য শহরে। কেউবা বিদেশেও থাকেন। কিন্তু পুজোর কটা দিন সকলেই রামগড়ের পুজোবাড়িতে আনন্দময়ীর উৎসবে ঠিক হাজির হবেনই। অতিথি অভ্যাগতদের ভিড়ে পুজোর কদিন গমগম করে এ বাড়ি। এঁদের পুজোর বিশেষত্ব এখনো দুই শতাব্দীর প্রাচীন নিয়ম মেনে পুজোর তিন দিনই বলি হয় মহামায়ার সামনে। এবং নিজের হাতে সেই বলিদান দেন পরিবারেরই কোনো সদস্য। প্রতিদিন দুবেলা দুই থেকে আড়াইশ জনের ভোগ রান্না হয় পুজোবাড়িতে। পুজোর আরেক বিশেষত্ব মা দুর্গা কে উৎসর্গ করা হয় আমিষ ভোগ। তিন দিনই মায়ের মাছের পদ অপরিহার্য। পুজোয় অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মা দুর্গার বামে থাকেন গণেশ। আর কার্তিকের অবস্থান কলা বউয়ের পাশে মায়ের ডান দিকে। এমনই নানা অভিনবত্বে বিশিষ্টতা অর্জন করেছে ঘটক বাড়ির পুজো। প্রসেনজিৎ জানান, ‘পরিবারের আড়াইশ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এক কালে এই পুজো শুরু করেছিলেন আমাদের বর্তমান প্রজন্মের প্রপিতামহের প্রপিতামহ।’ সে সময়কার তালপাতার পুঁথি ও ভুর্জ পত্র এবং তাল পাতাতেই লেখা চন্ডী আজো যত্নে রক্ষিত হয়ে আছে বাড়িতে।
পুজোর কূল পুরোহিত বংশানুক্রমিকভাবে মেদিনীপুরের নিকুশিনীর ভট্টাচার্য পরিবার থেকেই আসছেন। পুজোর ক’দিন বাড়ির যাবতীয় ভোগ রান্না করে আসছেন পরিবারের মহিলারাই। প্রতিবছর একই শিল্পী পরিবারের সদস্যরা গড়ে আসছেন একচালা প্রতিমা। তন্ত্র মতে শাক্ত আরাধনায় ঘটক বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য আজও বজায় রাখার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। কলকাতার পারিবারিক পুজোর ঐতিহ্যে ঘটক পরিবারের পুজো উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে।
এবার পুজোর অন্য আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে আগত অতিথি ও দর্শনার্থীদের থার্মাল স্ক্যানিং ও হাত স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা ছাড়াও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হচ্ছে। সম্পূর্ণ পুজোবাড়ি ও মন্ডপ সহ ঠাকুর দালান স্যানিটাইজ করে একই সঙ্গে বহুমানুষ যাতে প্রতিমা দর্শনে ভিড় না করেন তাও নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ।
আরও পড়ুন বাবা রামদেব হাতির পিঠে চড়ে যোগব্যায়ামের অভ্যাস দেখাতে গিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়েন

২৪X৭ নিউজ বেঙ্গল এ সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা এবং ইংলিশ খবর পড়ুন ২৪X৭ নিউজ বেঙ্গল এর ওয়েবসাইটে। নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে।
‘রঙ’ ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা ‘খাচ্ছে’? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম ‘সংবাদ’! ‘ব্রেকিং’ আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে ‘রঙ’ লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে ‘ফেক’ তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই ‘ফ্রি’ নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।
Discussion about this post