করোনার প্রকোপে বিশ্বজুড়ে চলছে লকডাউন। গৃহবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন সকলে। লকডাউনের জেরে থমকে গেছে জনজীবন। কাজকর্মের পাশাপাশি বিনোদনেও ছেদ ফেলেছে করোনা-কাঁটা। তাই সবকিছুর পাশাপাশি স্টুডিও পাড়াতেও শোনা যায়নি লাইট – ক্যামেরা – অ্যাকশন। কারণ, বন্ধ রেস্তোরাঁ, শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, সিনেমাহল। খুবই অনিশ্চয়তার মধ্যে চলেছে বিশ্ব। ক্রমেই বাড়ছে লকডাউনের সময়সীমা।৷ তাই স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকতে বাধ্য, কিন্তু এই একঘেয়েমি কাটাতে কি ভাবে সময় কাটাচ্ছেন সেলেব রা? মঙ্গলবার ২৪x৭ নিউজ বেঙ্গলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে “বোঝেনা সে বোঝেনা”, “সাত ভাই চম্পা ” ওয়েব সিরিজ “কামিনী” প্রমুখ ধারাবাহিকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নন্দিতা চ্যাটার্জী জানালেন তার অজানা কিছু কথা ।
কেমন আছেন লকডাউনে ?
নন্দিতা :- প্রথমে খুব ভয় লেগেছিল ও দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটছিল, কিন্তু পরে বুঝলাম এটাকে ভয় পেলে চলবে না। ভাবিনি এটা দীর্ঘ টাইম ধরে হবে। ২০২০ তে এসে লাইফে এমন এক সিচুয়েশনে দাঁড়াতে হবে এটা ভাবিনি আর এটা সত্যি যন্ত্রণাদায়ক তাই ঠিক ভালো আছি বলবো না, কারন আমরা এখন খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছি। তবে চেষ্টা করছি ভালো থাকার। লড়াই টা তো করতেই হবে। আর লড়াই করেই বাঁচতে হবে।
এই ছুটিতে কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
নন্দিতা :- “মাছে ভাতে বাঙ্গালী” আমি, ইলিশ,গলদা চিংড়ি, পমফ্রেট আমার খুব প্রিয়, তাই খাচ্ছি। তার পাশাপাশি, নিজের সাথে সময় কাটাতে খুব পছন্দ করি, কারণ এখন শুটিং নেই তাই নিজেকে নিজের মতন করে তৈরি করছি, আমাদের যৌথ ফ্যামিলি তাই পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি চুটিয়ে, পছন্দের মুভি দেখছি, তাছাড়া হইচই, আড্ডা টাইমস, নেটফ্লিক্স সবই চলছে পাল্লা দিয়ে, গান শুনছি, গল্পের বই এবং উপন্যাস পড়তে খুব ভালো লাগে , আর তার পাশাপাশি নাচ আমার ভীষণ প্রিয়, তাই নাচ তো হচ্ছেই, মায়ের সাথে রান্না শেখার পাশাপাশি সেলফিও তুলছি প্রচুর। আর প্রতিদিন নিয়ম করেই Yoga করছি।
আর আমার ৩০ আগস্ট জন্মদিন, প্রি বার্থডে সেলিব্রেশন তো হবেই এর পাশাপাশি কবজি ডুবিয়ে খাবো আর পরিবারের সঙ্গে কাটাবো সারাদিন।

আচ্ছা করোনা নিয়ে কি একটু বেশি ভয় লাগছে, নাকি সেই সময়টা বেশি ভয় লেগেছিল যেদিন প্রথম ক্যামেরার সামনে অভিনয় করেছেন?
নন্দিতা :- দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার,একটা প্রফেশন আর একটা জীবন যুদ্ধ। লেন্সের সামনে দাঁড়িয়ে স্ক্রিপ্টের চরিত্রে অভিনয় অবশ্যই ঘাম ঝরানো, ভয় তো পেয়েছিলাম, তবে ভুলের শাস্তি হয়তো একটু ” বকা খাওয়া ” কিন্তু করোনা শাস্তি “মৃত্যু” ও হতে পারে।
ঋষি মুখার্জী স্যার, স্বাগতা মুখার্জি ম্যাম র কাছে আমি অভিনয় শিখেছি, কিন্তু তাহলেও প্রথম ক্যামেরার সামনে অভিনয় তা এক আলাদা অনুভূতি।
তবে করোনা নিয়ে জীবনযুদ্ধ হয়তো একটু বেশিই ভয়ের ।। কারন অভিনয়ে ভুল হলে রিটেক করার সুযোগ আছে কিন্তু করোনা তে কোন রিটেক এর সুযোগ নেই।
কি মনে হয় ইন্ড্রাস্টিতে কতটা ক্ষতি হবে?
নন্দিতা :- ক্ষতির অঙ্ক অনেকটা। বিশেষ করে টেকনিক্যাল স্টাফ যারা রয়েছেন,তাঁদের। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য করণীয় কিছু নেই আপাতত।কারণ জীবন থাকলে ক্ষতির অঙ্ক টা ঠিক পূরণ হবে।
তবে খুব শীঘ্রই আমরা ফিরবো আবার, রুপোলি পর্দায়।
জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে পরিবারের সঙ্গে যে সময় কাটানো, সেটা অনেক কম হয়ে যায়, সারাদিন শুটিং এর জন্য, কিন্তু এখন পরিবারের সমস্ত অভিযোগ উঠে গিয়েছে তো সারাদিন পরিবারের সাথে থেকে?
নন্দিতা :- হাহাহা হমম,সেটা অবশ্য হয়েছে।তবে কাজের ব্যস্ততার মাঝেও যথাসাধ্য চেষ্টা করি পরিবারকে সময় দেওয়ার, কিন্তু তা কমই হয়ে ওঠে কারণ আমার বাড়ি কল্যাণীতে , আর আমার কাজ প্রফেশন সবই কলকাতায়। তাই এখন এই লকডাউনে আমি পুরোপুরি বাড়িতে। কিন্তু এখন আর সত্যি ভালো লাগছেনা, একঘেয়েমি এসে গিয়েছ। এখন মনে হচ্ছে কবে থেকে কাজ শুরু হবে। কারন একটা অভিনেত্রীর অভিনয় ই জীবন, তাই অভিনয় ছাড়া কি ঘরে বসে থাকা যায়?
এতদিনে কোন কোন ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন? এবং নতুন কোন ধারাবাহিকে দেখতে পাবো?
নন্দিতা :- প্রথমত বলি আমার শুরু মডেলিং দিয়ে, তারপর “বোঝেনা সে বোঝেনা”,” সাত ভাই চম্পা”, ওয়েব সিরিজ “কামিনি”,” ধানবাদ ব্লুজ”, বড় পর্দার ছবি “পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ উত্তর আসবে” এছাড়াও অরিজিৎ সিং এর বায়োগ্রাফি তে অভিনয় করেছি। (তবে এটা এখনো রিলিজ হয়নি রিলিজের অপেক্ষায়)।
আগামী টা আগামীতেই জানাবো। এটা সারপ্রাইজ থাক।
অনুগামীদের কি বলবেন আপনি?
নন্দিতা :- তাঁদের উদ্দেশ্যে এইটুকুই বলবো,এই লড়াই টা আমাদের সবার,আর সবাইকে একসাথেই লড়তে হবে।তাই প্লিজ প্লিজ প্লিজ তোমরা বাড়িতে থাকো,সুস্থ থাকো,পরিবারের মানুষজনের সাথে সময় কাটাও, এটাই সুযোগ, আর সব শেষে আমাকে যেভাবে ভালোবাসা দিয়ে এসেছো,সেভাবেই পাশে থেকো।
খুব তাড়াতাড়ি এই যুদ্ধ জিতে স্বাভাবিক জীবনে আমরা আবার তোমাদের সামনে আসবো।

প্রেম করছেন?
নন্দিতা :- না। এখনো কাউকে খুঁজে পায়নি, তবে এখন কাজের দিকেই মন দিয়েছি।
আচ্ছা ডায়েট কি এক আছে? নাকি এই লকডাউন এর ছুটিতে একটু উল্টোপাল্টা বাড়ির খাবার কব্জি ডুবিয়ে খাচ্ছেন?
নন্দিতা :- না, যেহেতু মা তার আদরের ” গুড্ডি ” কে অনেকদিন পর ফিরে পেয়েছেন দীর্ঘদিনের জন্য, আর মায়ের হাতের রান্না খেয়ে কি কোনদিন ডায়েট করা যায়? এটা কোনদিনও সম্ভব নয়। যেমন খাচ্ছি, আর তেমন নিয়মিত প্রতিদিন ওয়ার্কআউট এবং Yoga, করছি।
সমস্ত অভিনেত্রীর একটা পছন্দের চরিত্র থাকে কিন্তু আপনার কোন ধারাবাহিকের চরিত্রটি সবচেয়ে পছন্দের?
নন্দিতা :- শিল্পীর পরিচিতিই তো তার অভিনীত চরিত্রে।
একজন শিল্পী হিসেবে আজ অবধি করা সমস্ত চরিত্রই আমার পছন্দের। যে কোনো একটা বলা যায়না সেভাবে।তবে নেগেটিভ চরিত্রটি করতে একটু পছন্দ করি, তবে আমার প্রত্যেকটা কাজই নতুন। আর আমি সব কিছুই শেখার চেষ্টা করি, কারণ শেখার কোন বয়স নেই। অমিতাভ জি এবং মাধুরী ম্যাম আমার আইকন। তাদের প্রচুর পরিমাণে ফলো করি।
এখন বলিউডের সুশান্ত সিং রাজপুত মানেই আলাদা এক অধ্যায়, তার অকাল প্রয়াণে সবার জীবনে একটা ক্ষতস্তব্ধ দেখা গিয়েছে, এতে আপনি কতটা কত ক্ষতস্তব্ধ?
নন্দিতা :- আমি প্রথমে খবরটা দেখেছিলাম ফেসবুকের মাধ্যমে, বিশ্বাস ই করতে পারনি তারপর নিউজ এর মাধ্যমে পুরো খবরটা দেখে ভাবতেই পারিনি ওনার মত এক টেলেন্টেড হিরো এই ভাবে চলে যাবেন, আমি খবর টা মানতেই পারিনি, এখনও পাচ্ছিনা। কিন্তু সত্যি টা কে মানতেই হবে। আমার খুব পছন্দের নায়ক ছিলেন উনি, তাই তার কথা বললে শেষ করা যাবেনা। তার ছবি তার গানেই জেগে থাকুক আমাদের জীবনে।
কিছুদিন আগেই চলে গেলো রবীন্দ্র জয়ন্তী, রবীন্দ্র প্রয়ান বার্ষিকী আর সামনেই ১৫ ই আগস্ট ছোটবেলার স্মৃতি আজও কি মিস করেন?
নন্দিতা :- রবীন্দ্রনাথ আমাদের সবার মনে প্রাণে, আর ছোটবেলাকার স্মৃতি মানে এই দিনগুলোতে সকালবেলায় স্কুলে গিয়ে নাচ, কবিতা পাঠ, গান অনুষ্ঠান করা এটা আলাদাই মজা, আর তার সাথে সাথে লাড্ডু চকলেট পাওয়া , লাড্ডু খেতে আমার খুব ভালো লাগে। হ্যাঁ এইগুলো এখনও খুবই মিস করি। কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে এগুলো হারিয়ে গেছে অভিনয় এর মাঝে। আর এইগুলো এখন চাইলেও ফিরে পাবো না, আর স্কুল জীবন মানেই আলাদা এক “সেরার সেরা” জীবন।
Discussion about this post