দীপ দেব: গত ৯ মে তথা মঙ্গলবার শিলচর ইটখলা নিবাসী শ্রীবাস বিশ্বাস(২৫) অতিরিক্ত মাত্রায় মদ সেবন করে নিজের বাড়ির সহ আশ-পাশের লোকজনদের উপর গালিগালাজ সহ মারধর চালানোর চেষ্টা করে,বেগতিক অবস্থা দেখে পরিবারের মানুষ ও পাড়ার লোক জনেরা মালগ্রাম থানায় খবর দেন ও সঙ্গে -সঙ্গে মালুগ্ৰামের থানার পুলিশ বাহিনীরা ইটখলা বাঁধের থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় এবং শ্রীবাসকে শিলচর সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে পুনরায় থানায় নিয়ে আসা হয়।আবার শ্রীবাস বিশ্বাসকে মালগ্রাম থানার নির্দেশে পরিবার ও প্রতিবেশীরা মিলে শিলচরের সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত সুবীর ধরের মাধ্যমে নেশামুক্তি ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে না দিয়ে শিলচর মেহেরপুরের মেডিনোভা হাসপাতালের গলিতে থাকা সরকারী প্রকল্পে চলা প্যারাডাইস হোম নামের একটি মানষিক ভারসাম্য হীন অনাথ মানুষদের আবাসিক কেন্দ্রে সেদিন বিকালে নিয়ে রাখা হয় এবং পরের দিন ১০ মে তথা বুধবার বিকেলে শ্রীবাস বিশ্বাসের পরিবারের কাছে ফোন আসে তার মৃত্যু ঘটেছে বলে ,সঙ্গে -সঙ্গে পরিবার সহ আশ-পাশের লোকজনেরা একত্রিত হয়ে ছুটে যান শিলচর মেডিকেল কলেজের ময়না তদন্তের স্থানে এবং সেখানে গিয়ে দেখেন শ্রীবাস বিশ্বাসের মৃতদেহের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত -বিক্ষত ও মারের আঘাত।
অন্যদিকে খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রেই ইটখলার একাংশ্ জনগন সড়ক অবরোধ ও ধর্ণা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁর অকাল মৃত্যুর জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয় ও সেই দিন সন্ধ্যায় শ্রীবাস বিশ্বাসের মরদেহটি নিয়ে ইটখলা থেকে উপযুক্ত বিচারের দাবি জানিয়ে এক মিছিলের মাধ্যমে শিলচর শ্মশানে নিয়ে আসা হয় ও তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। সেদিন দুপুরে বরাকভ্যালি ডি-এডিকশন সেন্টার্স এসোসিয়েশনের সদস্যরা একত্রিত হয়ে প্যারাডাইস হোমে গিয়ে উপস্থিত হন এবং তাদের সঙ্গে কাছাড়ের এডিসি হিরোমনি মিলি, কাছাড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত সেন, শিলচর সদর থানার ইনচার্জ অমৃত কুমার সিং সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে উপস্থিত হয়ে দেখেন সেখানে রাখা বিভিন্ন বয়সের মানসিক ভারসাম্যহীন পুরুষ ও মহিলাদের সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে,নেই কোনো ভালো তাদের বিশ্রামের বিছানা ব্যবস্থা,নেই কোনো খাওয়ার ব্যবস্থা,নেই কোনো অফিস কর্মী,নেই কোনো সি.সি টিভির ব্যবস্থা,এমনকি এই হোমটি যিনি মূখ্য পরিচালক করছেন মফুতজূল হুসেন বড়ভূঁইয়া উপস্থিত নন,সে গা ডাকা দিতে সক্ষম হয়। সেখানে উপস্থিত বরাকভ্যালি ডি-এডিকশন সেন্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি তথা সাবাসপুর স্থিত নিউ লাইফ ফাউন্ডেশন নেশামুক্তি ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে,এই প্যারাডাইস মানসিক ভারসাম্যহীন হোমটির মূখ্য পরিচালক মফুতজূল হুসেন বড়ভূঁইয়া কেন্দ্রীয় সরকারের অটল অমৃত ও আয়ূষমান কার্ডের নামে সরকারি প্রকল্পের কোটি টাকা বেআইনিভাবে আত্মসাৎতের অভিযোগের দায়ে সে হাইলাকান্দি জেলেও ছিলেন,তাহলে সে ব্যক্তি কিভাবে সরকারি পাচ্ছে?মফিজুল হুসেন বড়ভূঁইয়া তার সহযোগীরা সমাজসেবার নাম করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছে এবং এই হোমে অসহায় ও অনাথ মানষিক ভারসাম্য হীন পুরুষ ও মহিলাদেরকে রাস্তার থেকে তুলে এনে অত্যাচার চালানো হয় এবং পরবর্তী সময়ে তাদের মৃত্যু ঘটে,এই কথার প্রত্যক্ষ প্রমান হচ্ছে শ্রীবাস বিশ্বাসের রহস্যজনক মৃত্যু।
এরপর সেদিন বিকেলেই জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ও কাছাড়ের এডিসি হিরোমনি মিলি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত সেন ও শিলচর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ অমৃত কুমার সিং মহাশয়দের উপস্থিতিতে কাছাড় পুলিশ বাহিনীর সাহায্যে সাবাসপুর স্থিত নিউ লাইফ ফাউন্ডেশনে উক্ত হোমে থাকা ১৩ জন বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও মহিলা মানষিক ভারসাম্যহীনদের প্রেরন করা হয় এবং উক্ত হোমের মেইন গেইটে অনির্দিষ্টকালের জন্য সরকারি সিল মোহর যুক্ত তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।এর পরের দিন শুক্রবার বরাকভ্যালি ডি-এডিকশন সেন্টার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক তথা টুয়েলভ স্টেপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক দীপ ভট্টাচার্য্য, শিলচর নবজ্যোতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি ভট্টাচায্য, সম্পাদক বল্টু দাস, ফাউন্ডেশন লাইফ লাইন হেল্পিং অ্যান্ড সোসাইটির সভাপতি সাজাহানুল হক বড়ভূঁইয়া সম্পাদক গুড্ডু কুমার সিং, ব্রাইট লাইফ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক সালেহ আহমেদ লস্কর (রঞ্জু) মহাশয়েরা যৌথভাবে শিলচর ইটখলা স্থিত সদ্য প্রয়াত শ্রীবাস বিশ্বাসের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে মৃতের পরিবারের হাতে কিছু অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অকালমৃত্যু হওয়া শ্রীবাস বিশ্বাসের মৃত্যুর ঘটনাটির বিবরনে শুনেন,শ্রীবাসের মা কল্পনা বিশ্বাস ও বড় বোন সুনীতা দাস বলেন, শ্রীবাস বিশ্বাসের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় নাই,তাঁকে প্যারডাইস মানষিক ভারসাম্যহীন হোমে নিয়ে গিয়ে অমানবিক অত্যাচার চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে,এই বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আইনিভাবে উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের ফাঁসির বিনম্র অনুরোধ জানান,যাতে আগামীদিনে সমাজসেবার নাম করে নিয়ে গিয়ে কোনো অনাথ ও অসহায়দের মৃত্যু না ঘটেনি এবং উপস্থিত বরাকভ্যালি ডি-এডিকশন সেন্টার্স এসোসিয়েশনের প্রত্যেক সদস্যদেরকে সাধুবাদ জানান।
পরবর্তী সময়ে বরাকভ্যালি ডি-এডিকশন সেন্টার্স এসোসিয়েশনের সদস্যরা মালুগ্ৰাম থানায় উপস্থিত হয়ে ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ কমল বরো মহাশয়ের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, তিনি জানান মালগ্রাম পুলিশ সত্যের পথে আছেন,যদি শ্রীবাস বিশ্বাসের স্বাভাবিক মৃত্যু না হয়ে হত্যা হয়ে থাকে, তাহলে দোষীদের নিঃসন্দেহে শাস্তি দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। বরাকভ্যালি ডি-এডিকশন সেন্টার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক তথা টুয়েলভ স্টেপ ফাউন্ডেশন নেশামুক্তি ও পূর্ণবাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক দীপ ভট্টাচার্য্য ও তথা শিলচর নবজ্যোতি ফাউন্ডেশন নেশামুক্তি ও পূর্ণবাসন কেন্দ্রের সভাপতি ভট্টাচার্য্য মহাশয়েরা উভয়েরই সাংবাদ মাধ্যমের সাহায্যে শ্রীবাস বিশ্বাসের মৃত্যুর ঘটনার তীব্র সমালোচনা জানিয়ে প্যারাডাইস মানসিক ভারসাম্যহীন হোমটিকে চিরকালের জন্য বন্ধের অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসনের কাছে।

২৪X৭ নিউজ বেঙ্গল এ সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা এবং ইংলিশ খবর পড়ুন ২৪X৭ নিউজ বেঙ্গল এর ওয়েবসাইটে। নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে।
‘রঙ’ ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা ‘খাচ্ছে’? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম ‘সংবাদ’! ‘ব্রেকিং’ আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে ‘রঙ’ লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে ‘ফেক’ তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই ‘ফ্রি’ নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।
Discussion about this post