রাজকুমার দাস : ১৯৪৭ এর পর ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ২০০ র বেশি রাজনৈতিক দলের উত্থান হয়।১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে কংগ্রেসের রাজনৈতিক দল হিসেবে সৃষ্টির সুবাদে সবচেয়ে প্রাচীন দলের তকমা মেলে। দীর্ঘ প্রায় চার দশকের একচ্ছত্র ক্ষমতায়ণের পর ১৯৬৭ সালে দেশে বহুদলীয় রাজনীতির বিস্তার ঘটে।নতুন নতুন দল যেমন সৃষ্টি হয়েছে ,কালের গ্বহরে হারিয়েও গেছে অনেক দল। আবার নাম পরিবর্তনেও অনেক দলের সংযুক্তি যেমন ঘটেছে, বিভাজনও ঘটেছে।
দেশের জাতীয় বা আঞ্চলিক দলের আজ মুখ্য উদ্দেশ্য দলীয় ভাবমূর্তিতে ক্ষমতা লাভ। ফলে দ্বিধাবিভক্ত দেশের মানুষের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অস্বচ্ছ থেকে যায়। সেই সুযোগ নিয়ে জোট ও ভোটের রাজনীতিতে মেতে ওঠে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি। এই স্বার্থন্বেষী রাজনীতির পাটিগণিতের সমীকরণে দেশের সব রাজনৈতিক দল ক্ষমতা দখলের জন্য কখন যে কে কার শত্রু বা মিত্র হয়ে ওঠে তা ভগবানও টের পান না। ফলে ক্রমশ রাজনৈতিক দলগুলির আদর্শগত স্বচ্ছতায় জনগণ আস্থাহীন হয়ে পড়ছেন। বিকল্পের সন্ধান না মেলায় জনগন আজ বিভ্রান্ত।
যদিও আমেরিকার প্রাণপুরুষ আব্রাহাম লিঙ্কনের একটি বাণী_ ডেমোক্রেসি অফ দ্য পিউপল, বাই দ্য পিউপল , ফর দ্য পিউপলযা কিনা তিনি ১৮৬৩সালের ১৯ নভেম্বর গেটিসবার্গে এক সভায় বলেছিলেন,,যদিও এই বাণীটির আসল জনক দার্শনিক , সমাজসেবী ক্লিয়ান বলেন, খ্রিস্টপূর্ব ৪২২ সালে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়েই তিনি বলেছিলেন”দ্যাট শ্যাল বি দি ডেমোক্রেটিক হুইচ শ্যাল বি দ্য পিউপল, ফর দ্য পিউপল”। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশের মতই ভারতেও গণতন্ত্র শব্দ থেকে গণ কথাটি গৌণ হয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘদিনের অবহেলায় বঞ্চনায় দেশের নিপীড়িত মানুষ উত্তরপ্রদেশের কাঁসিরামের নেতৃত্বে বহুজন সমাজ পার্টি গড়ে তোলে। এই মুহূর্তে বাংলায় গড়ে উঠেছে আব্বাস সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট।
ইতিহাস বলে,অতীতে আম্বেদকরের নেতৃত্বেও গড়ে উঠেছিল বঞ্চিত মানুষের দল ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি।সময়টা ছিল ১৯৩৬সাল। পরে অবশ্য সেই দলকে তিনি শিডিউল কাস্টেড ফেডারেশন নামে পরিবর্তন করেন। কিন্তু বর্ণ বিভেদে সেই দল জনতার আশীর্বাদ পায়নি। দেশের বিখ্যাত বিপ্লবী ও বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা গড়ে তোলেন নিজের রাজনৈতিক দল স্বতন্ত্র পার্টি। সেই দলের অবশ্য আয়ু ছিল সামান্যই।
যে খবরের জন্য এত কথার অবতারণা, সেটা হলো,বেশ কিছু সময়ের ব্যবধানে আবার একজন দৃঢ , প্রত্যয়ী,আত্মবিশ্বাসে ভরপুর বঙ্গসন্তান কবি,বিজ্ঞানী ও দেশের শীর্ষ আদালতের আইনবিদ ড: সুবোধচন্দ্র রায় একটি রাজনৈতিক দল ম্যায় হী ভারত গড়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক ময়দানে বিজ্ঞানীর পদার্পণ নিয়ে মেঘনাদ সাহা বলেছিলেন_ “বিজ্ঞানীদের প্রায়ই অভিযোগ করা হয়, যে তাঁরা রূপকথার জগতে থাকেন, তাঁরা বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাঁদের মনকে কষ্ট দিতে চান না।,,,,, কিন্তু বর্তমান সমাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আইনশৃঙ্খলার মতনই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ফলে আমিও ধীরেধীরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি। অবশ্য তার প্রধান কারণ, আমি আমার সুচারু কাজের মাধ্যমে নিজেকে দেশ মাতৃকার উন্নতি কর্মের অংশ করে নিতে চেয়েছি।”
একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন আত্মনির্ভর ,নিজের লক্ষ্যে দৃঢ় ড: রায়।বাংলার রাজনৈতিক সংবাদদাতারা যখন ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ নেতাদের দল বদলের খবর সংগ্রহে ব্যস্ত, তখন গত বুধবার বিকেলে কলকাতার প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করলেন ম্যায় হী ভারত দলের রাষ্ট্রীয় অধ্যক্ষ ড:সুবোধ চন্দ্র রায়। মঞ্চে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সহ অধ্যক্ষ আনোয়ার সৈয়দ মালিহাবাদি,দলের সম্পাদক প্রবীণ সরফ এবং কোষাধ্যক্ষ সৌমিতা রায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে বিলি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দলের রাষ্ট্রীয় অধ্যক্ষ ড:রায় তিনটি বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরেন। যা আজ পর্যন্ত দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনও রাজনৈতিক দল বলে নি। ১)১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট কি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে? ২)১৯৪৭সালের১৫ আগস্ট কি কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করা হয়েছিল?৩) এদেশে কি কেউ কি কখনও আইনসম্মত ভাবে প্রধানমন্ত্রীর বা মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন হয়েছেন? এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর ড: রায় নিজেই দিয়ে বলেছেন, যদি এই প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর পাওয়া না যায়, তাহলে বুঝতে হবে শুরু থেকেই আমরা ভুলপথে পরিচালিত হয়েছি। এবার তাই আমাদের মৌলিক পরিবর্তনের পথ খুঁজতে হবে। সেই অনুসন্ধানে এদেশের প্রতিটি মানুষকে সঙ্গী হিসেবে পেতে চাইছে ম্যায় হী ভারত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ড; রায় আরও জানান,তাঁরা ভোটে লড়তে নয়, অংশগ্রহণে ইচ্ছুক।কেননা গণতন্ত্রে জনগণ ভোটে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন।অথচ সেই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করে নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেন।আসলে জনগন কোনও অধিকার কারও দয়ায় পেতে চান না । কারণ জনগণ নিজেই ক্ষমতাবান। জনগণকে তাঁদের নিজস্ব ক্ষমতার চেতনা আনতে ম্যায় হী ভারত দল প্রাথমিক দায়িত্ব মনে করে। বাংলা তথা ভারতের রাজনৈতিক ময়দানে এই দলের সাফল্য কিভাবে আসবে তা জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে।
২৪X৭ নিউজ বেঙ্গল এ সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা এবং ইংলিশ খবর পড়ুন ২৪X৭ নিউজ বেঙ্গল এর ওয়েবসাইটে। নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে।
‘রঙ’ ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা ‘খাচ্ছে’? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম ‘সংবাদ’! ‘ব্রেকিং’ আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে ‘রঙ’ লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে ‘ফেক’ তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই ‘ফ্রি’ নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।
Discussion about this post