শুভজিৎ মাখাল: আমাদের এই চেনা পৃথিবীর মধ্যে রয়েছে অনেক রহস্য। যেগুলির আজও সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি। এমনি হাজারটি অমীমাংসিত ঘটনার মধ্যে একটি হলো ‘দিয়াতলোভ গিরিপথ’। ‘দিয়াতলোভ গিরিপথ’ অথবা ‘দিয়াতলোভ পাশ’ কেউ আবার উল্লেখ করে থাকে “ডেভিল পাশ”। এই গিরিপথ অবস্থিত রাশিয়ার উড়াল পর্বতের উওর দিকে। ঘটনার সূত্রপাত ১৯৫৯ সালে। একটি ৯ সদস্যদের দল ট্রেকিং করতে গিয়েছিল দিয়াতলোভ গিরিপথে, ওরা ৯ জন ছিল উড়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দক্ষ ট্রেকার। দলটি প্রথমে ট্রেনে করে যাএা করে ইভদেল শহরে যায়, তারপর তারা সকলে ট্রাকে করে ভিজহাই গ্রামে পৌঁছায় যেখানে তারা রাত কাটায়। তার পরের দিন ২৫ শে জানুয়ারি তারা ট্রেকিং করতে বেরিয়ে পড়ে। গ্ৰুপটির দলনেতা ছিল ইগর দিয়াতলব যার নামে গিরিপথটির নামকরণ করা হয়েছে। ইগর কথা দিয়েছিল যে ভিজহাই গ্ৰামে ফিরে এসে টেলিগ্রাম পাঠাবে। ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ তারিখ পেড়িয়ে যাওয়ার পরেও যখন গ্ৰুপটি টেলিগ্রাম পাঠাইনি তখন কেউ খুব একটা আশ্চর্য হয়নি কারণ এটি ট্রেকিং করতে গিয়ে হয়ে থাকে। ২০ ফেব্রুয়ারি পেড়িয়ে যাওয়ার পরে ট্রেকার দলটির বাড়ির লোকজনেরা উদ্ধার অভিযানের দাবি করল সরকার কর্তৃপক্ষের কাছে। যে ইনস্টিটিউটের সদস্য নিখোঁজ গ্রপটি ছিল তারা একটি উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে উদ্বার কাজে পাঠায়।

সরকারের পক্ষ থেকে সেনা ও মিলিশিয়া (রাশিয়ান পুলিশ) উদ্ধার কাজে নামানো হয়। ২৬ শে ফেব্রুয়ারি উদ্ধারকারী দল নিখোঁজ গ্রুপটির টেন্ট অথবা তাঁবুটি পায় খোলাত সাইখ্যাল নামক একটি জায়গাতে। তাঁবুটি সহ পুরো ক্যাম্প সাইটের অবস্থা দেখে সকলের প্রাণ আঁতকে ওঠে। তাঁবুটি পুরো বরফে ঢাকা ও জিনিসপত্র সব এখানে ওখানে ছড়িয়ে রয়েছে। তদন্তকারী দলের মতে তাঁবুটিকে ভিতর থেকে অর্ধেক ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। উদ্ধারকারী কতৃপক্ষ লক্ষ করে নয়টি নিখোঁজ ট্রেকারের পদচিহ্ন থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সকলে জুতো ছাড়া শুধু মোজা পড়ে ছুটে পালিয়েছে। কেউ কি তাদের তাড়া করেছিল অথবা কিছু দেখে তারা ভয় পেয়েছিল এর আসল কারণ রহস্য থেকে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নয়টি ট্রেকারের মৃতদেহ পাওয়া য়ায় একসাথে নয়, আলাদা আলাদা জায়গায়। প্রথম দুই মৃতদেহের পরণে ছিল শুধু অন্তর্বাস ও মোজা। অর্থাৎ তারা নিজেদের বস্ত্র পরার সময় পাইনি। নয়টির মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হাইপোথার্মিয়ার কারণে হয়। আরও দুইজনের মৃত্যু ছাতিতে গভীর আঘাতের কারণে হয় ও শেষেটির মাথার খুলি ভাঙার কারণে মৃত্যু ঘটেছে। মৃতদেহের মধ্যে একটি মহিলা ট্রেকারের চোখ, ঠোঁটের কিছু অংশ, ও জিহ্বার পুরোটাই উধাও ছিল। একটি তদন্তকারী দলের দাবি ভয়াবহ তুষারপাতের কারণে তাদের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এটি খারিজ করে দেওয়া হয়ে কারণ মৃতদেহ গুলিতে তুষারপাতের কারণে ঘটিত মৃত্যুল কোন লক্ষণ নেই। আরেকটি দলের মতে দিয়াতলোভ অঞ্চলে আদিবাসী গোষ্ঠী মানসীদের কাজ। কিন্তু এটা ও খারিজ করে দেওয়া হয় কারণ মানসী গোষ্ঠী মানুষেরা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ হয়। তারা জানায় তারা এই কাজ করেনি।

মৃতদেহগুলোতে কোনো হাতাহাতির চিহ্ন ছিল না। অনেকে ইয়েতির প্রসঙ্গ টেনে আনে কিন্ত অধিক মানুষই ইয়েতির অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা। কিছুজনের মতে, রাশিয়ার বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা কে.জি.বি – এর পরিচালনায় নয়জনকে মেরে ফেলা হয় কারণ তারা সামরিক পরীক্ষার সাইটে অননুমোদিত প্রবেশ করে ক্যাম্প করে। কিন্তু সরকার থেকে কে.জি.বি – এর কোন হাত নেই সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। তখনকার সোভিয়েত সরকার কোন সঠিক কারণ না পেয়ে তুষারপাতকে মৃত্যুর কারণ দেখিয়ে ফাইল বন্ধ করে দেয়। ২০২১ সালে ইপিএপএল এবং ইটিএইচ জুরিখের কিছু বিবিজ্ঞানীরা জানায় স্লাব তুষারপাত নামক এক ধরনের তুষারপাত কিছুটা হলেও দায়ী হতে পারে কিন্তু পুরোপুরি দায়ী নয়। এই রহস্য হয় তো রহস্যই থেকে যাবে, ভবিষ্যতে সত্য উদ্ঘাটন না হওয়া পর্যন্ত।

২৪X৭ নিউজ বেঙ্গল এ সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা এবং ইংলিশ খবর পড়ুন ২৪X৭ নিউজ বেঙ্গল এর ওয়েবসাইটে। নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে।
‘রঙ’ ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা ‘খাচ্ছে’? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম ‘সংবাদ’! ‘ব্রেকিং’ আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে ‘রঙ’ লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে ‘ফেক’ তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই ‘ফ্রি’ নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।
Discussion about this post