তনুময় দেবনাথ : উত্তরবঙ্গের ছোট্ট শহর দিনহাটা। কিন্তু সংস্কৃতিতে বরাবর এগিয়ে এই শহর। ২০১৮ সালে বাংলার সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলতে উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা এই দিনহাটা শহর থেকেই শুরু হয়। প্রতিবছরের মত এবছরও দিনহাটা মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় নতুন বছরের প্রথম দিনে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হল।এই শোভাযাত্রায় দিনহাটার বিশিষ্ট জনদের পাশাপাশি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরের মানুষ ও নবীন প্রজন্মের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এই শোভাযাত্রাকে ফুটিয়ে তুলতে নানা ধরনের শিল্পকর্ম তৈরির কাজে দিনরাত এক করে কাজ করেছে সংস্থার সদস্যরা।
শহরের বোর্ডিং পাড়া মাঠ থেকে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়ে গোটা শহর পরিক্রমা করে আবার বোর্ডিং মাঠে এসে শেষ হয়।তারপর সেখানে চলে বৈশাখী আড্ডা। নাচে, গানে, আড্ডায় জমজমাটভাবে পালিত হয় শোভাযাত্রা।পাশাপাশি, এবছর নতুন চমক ছিল বৈশাখী হাট। এই হাটে ছিল তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের তৈরি শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় দলমত,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকল দিনহাটাবাসীর অংশ নিয়েছে । ২০১৬ সালে ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর মানবতার অধরা বা অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করেছে।
এই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়েই মূলত বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়, সঙ্গে দেওয়া হয় সম্প্রীতির বার্তা।শোভাযাত্রা এগিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে চলে নৃত্যানুষ্ঠান। বিভিন্ন ধরনের মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন উদযাপন কমিটির সদস্যরা। মেয়েরা ঐতিহ্যবাহী হলুদ শাড়ি ও ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে মূলত শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। এদিনের এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন দিনহাটা সংস্কৃতিপ্রেমী বিভিন্ন মানুষেরা ও বিশিষ্ঠজনেরা। উপস্থিত ছিলেন দিনহাটা হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক রঞ্জিত মন্ডল, বিশিষ্ট চিকিৎসক অজয় মন্ডল, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত প্রাক্তন শিক্ষক শ্যামল ধর, শিক্ষক স্বপনবিকাশ পাল, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী রথীন্দ্র নাথ সাহা, প্রসেনজিৎ ভৌমিক, আবৃত্তিকার শিলাদিত্য রায়, বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ চন্দন সেনগুপ্ত, দিনহাটা নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক জয়গোপাল, নাট্যব্যক্তিত্ব প্রবীর পাল, আবৃত্তিকার স্বপন রায়। এছাড়াও ট্রান্স জেন্ডরাও সুমি দাসের নেতৃত্ব অংশ নেন।
আয়োজকদের পক্ষে সুব্রত রায়, সৌরভ চন্দ, আবির দেব, শুভ্রালোক দাস, টুটল সরকার জানান, বাংলা নববর্ষের দিনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিতে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রথম ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের বুকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। সেই শোভাযাত্রার অনুকরণ করে ২০১৮ সালে উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম দিনহাটা শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সেবার সেই শোভাযাত্রা দিনহাটা শহরের সকলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে নববর্ষের দিনে দিনহাটার বুকে এই শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবছর ষষ্ঠ বর্ষ মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পারস্পরিক সহবস্তানের ভিত্তিতে সারিবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে তারা শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে।রাস্তা পরিক্রমা করাকালীন নৃত্য পরিবেশন করে খুদে শিল্পীরা। মাউন্ট পেপার বোর্ড দিয়ে বিভিন্ন মুখোশ তৈরি করা হয়।বাঘ,হাতি,প্যাঁচার আদলের পাশাপাশি বিভিন্ন দেবদেবীর আদলে তৈরি করা হয় মুখোশ।সেগুলিকে হাতে নিয়েই তারা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে।বাংলার সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পালকি ও মঙ্গল ঘট ব্যবহার করা হয় শোভাযাত্রায়।শহরের প্রাণকেন্দ্র দিনহাটা পাঁচমাথার মোড়ের রাস্তায় রাত জেগে আলপনা দিয়ে সাজিয়ে তোলে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। এদিনের এই শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু’পাশে প্রচুর মানুষ ভিড় করে।

২৪X৭ নিউজ বেঙ্গল এ সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা এবং ইংলিশ খবর পড়ুন ২৪X৭ নিউজ বেঙ্গল এর ওয়েবসাইটে। নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে।
‘রঙ’ ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা ‘খাচ্ছে’? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম ‘সংবাদ’! ‘ব্রেকিং’ আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে ‘রঙ’ লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে ‘ফেক’ তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই ‘ফ্রি’ নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।
Discussion about this post