বিশ্বজিত সাহা: উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতির এক উৎকৃষ্ট কেন্দ্র। গোবরডাঙার এই ঐতিহ্য অতি প্রাচীন। এখানকার বিভিন্ন নাট্য দলের নতুন নতুন ভাবনায় বিভিন্ন প্রযোজনা বাংলাতেই নয়, সমগ্র দেশের থিয়েটার প্রেমী মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। যে কারণে গোবরডাঙাকে বলা হয় ‘সিটি অব থিয়েটার’। বছর কুড়ি আগে নাট্য বিদ্যালয় তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন ৪২ বছর ধরে নাট্যচর্চায় নিয়োজিত গোবরডাঙা শিল্পায়নের প্রানপুরুষ বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব আশিস চট্টোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যে কাজ শুরুও করেছিলেন তিনি। অতিমারির ফলে সেই কাজ সাময়িক বাঁধা কাটিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী তথা নাট্য ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসুর উৎসাহ ও শুভেচ্ছায় নব কলেবরে নাট্য বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হচ্ছে আগামী ১ মে থেকে।
গোবরডাঙ্গার অন্যতম জনপ্রিয় নাট্যদল ‘গোবরডাঙ্গা শিল্পায়ন’-এর উদ্যোগে এবং ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম নির্মিত স্টুডিও থিয়েটার এবং নাট্য বিদ্যালয়ের নতুন ভাবে উদ্বোধন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা শিল্পায়নে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন আশিস চট্টোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন দীপা ব্রহ্ম এবং অধ্যাপক ডঃ দীপঙ্কর মল্লিক। আশিস চট্টোপাধ্যায় জানালেন, এই থিয়েটারের স্টুডিওতে মঞ্চসজ্জা থেকে আবহ, রূপসজ্জা থেকে আলো, প্রতিটি বিভাগের হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হবে। শেখানো হবে থিয়েটারে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার এবং থিয়েটারের জন্য বিভিন্ন ডান্স ফর্ম। এখানে থাকবে উন্নত মহড়াকক্ষ, লাইব্রেরি, আর্কাইভ এবং মিউজিয়াম। শিক্ষার জন্য দেখানো হবে বিভিন্ন কাল্ট সিনেমা। শেখানো হবে প্রজেকশন রুমের নানা কর্মপদ্ধতি।’ নাট্য বিদ্যালয়ের ক্লাসের প্রসঙ্গে দীপা ব্রহ্ম জানালেন, প্রতি রবিবার, ক্লাস বসবে দুটি বিভাগে। প্রথমটি ৯ থেকে ১৩ বছর এবং দ্বিতীয়টি ১৮ বছরের উর্ধ্বে। থিয়েটার প্রেমী সব মানুষই সেখানে শিক্ষালাভ করতে পারবে।
আরো পড়ুন Lakshmir Bhandar: ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’কে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নবান্নের
‘একেবারে নন ফরম্যাল প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রসেনিয়াম এবং নন প্রসেনিয়াম – দু’ভাবেই শেখানো হবে। থাকছে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্সও। ক্লাস হবে প্রতি সোমবার। বাংলা সহ দেশের সেরা প্রশিক্ষকেরা এই ক্লাসগুলি নেবেন’। ডঃ মল্লিক বলেন, নন ফরম্যাল এডুকেশনের এক বিশিষ্ট কেন্দ্র হয়ে উঠবে ‘শিল্পায়ন নাট্য বিদ্যালয়’। ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল অফ থিয়েটার স্টাডিজ সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আরো বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা চলছে’।
স্বপ্নের এই নাট্য বিদ্যালয় গড়ে তুলতে গোবরডাঙা শিল্পায়নের পাশে এগিয়ে এসেছেন গোবরডাঙা পৌরসভার প্রাক্তন ও বর্তমান পৌরপ্রধান সুভাষ দত্ত, শঙ্কর দত্ত থেকে বিভিন্ন নাট্যদল, নাট্যকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বানী ‘থিয়েটার লোকশিক্ষা দেয়’— কে বাস্তবায়িত করে তুলতে পরিশ্রম করে চলেছেন গোবরডাঙা শিল্পায়নের প্রতিটি নাট্যকর্মী।
Discussion about this post