সুরশ্রী রায় চৌধুরী : ভারতের বেশ কয়েকটা রাজ্যের অর্থ্যনৈতিক অবস্থা খুবই খাড়াপ শুধু মাত্র রাজনৈতিক জনমোহিনী প্রকল্পের জন্য। ভারতীয় ইউনিয়নের অংশ না হলে বেশ কয়েকটি রাজ্যের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মত হত। ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। এক কেজি চালের দাম দাঁড়িয়েছে ২৩০ টাকা। গুঁড়ো দুধ কিনতে হচ্ছে ১৯০০ টাকায়। ভারতে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির জনমোহিনী ঘোষণা, পূরণ করতে গিয়ে অতিরিক্ত ঋণ নিতে হয় রাজ্যগুলিকে। এই বিষয়টা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন দেশের অনেক শীর্ষ আমলাই। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরের সচিবদের দীর্ঘ বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই কয়েকজন সচিব প্রকাশ্যে এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এই সচিবদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তাঁদের মতে, অনেক রাজ্যের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। বিভিন্ন জনমোহিনী প্রকল্প বেশি দিন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অবিলম্বে এই প্রবণতা বন্ধ না হলে অনেক রাজ্যই আর্থিকভাবে সমস্যায় পড়বে। যেসব রাজ্যে ঋণের বোঝা সবচেয়ে বেশি সেগুলি হল পঞ্জাব, দিল্লি, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই রাজ্যগুলিতে ফ্রি রাজনীতির চল সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে আম আদমি পার্টি, তৃণমূল বা বিজেপি, সব রাজনৈতিক দলেরই একই সমস্যা জনমহিনী প্রকল্প। এই প্রকল্প এর জন্য অতিরিক্ত ঋণ নিতে হচ্ছে। যার চাপ পড়ছে রাজ্যের কোষাগারে। বেহাল হচ্ছে অর্থনৈতিক অবস্থা। ছত্তিসগড়, রাজস্থানের মতো রাজ্য পুরনো পেনশন স্কিম চালুর ঘোষণা করেছে। দিল্লির মতো রাজ্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দিচ্ছে যা রাজকোষের উপর বোঝা বাড়াচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ, গোয়ায় বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস দেওয়া ছাড়াও একাধিক ‘ফ্রি’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল বিজেপিও।
আরো পড়ুন ইছাপুর রামনগরে বোমাবাজির ঘটনায় তাজা বোমা-সহ ধৃত দুই দুষ্কৃতী, বাজেয়াপ্ত স্কুটি
বিভিন্ন রাজ্যের বাজেট অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যগুলির ঋণের বোঝা গত ১৫ বছরে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। রাজ্যগুলির গড় ঋণ তাদের জিডিপি-র ৩১.৩ শতাংশ। একইভাবে সমস্ত রাজ্যের মোট রাজস্ব ঘাটতি ১৭ বছরে সর্বোচ্চ ৪.২ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ঋণ এবং জিএসডিপি (গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রডাক্ট)-এর অনুপাত সর্বোচ্চ ছিল পঞ্জাবে, ৫৩.৩ শতাংশ।
এর অর্থ হল, পঞ্জাবের ডিজিপি-র ৫৩.৩ শতাংশই ঋণ। একইভাবে রাজস্থানের অনুপাত ৩৯.৮ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গের ৩৮.৮ শতাংশ, কেরলের ৩৮.৩ শতাংশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের ঋণ-জিএসডিপি অনুপাত ৩৭.৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এই সমস্ত রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে রাজস্ব ঘাটতি অনুদান পায়। এমনকী, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতের মতো অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী রাজ্যগুলির ঋণের বোঝা ক্রমশ বাড়ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গুজরাতের ঋণ-জিএসডিপি অনুপাত ২৩ শতাংশ এবং মহারাষ্ট্রের ২০ শতাংশ।
Discussion about this post